দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি এখন জানতে এসেছেন দুধ খাওয়ার উপকারিতা কি। দুধ হল একটি সাদা তরল যা বিভিন্ন গবাদি পশু সহ মানুষের স্তন থেকে নিঃসৃত হয়।মানুষ সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষেরা বিভিন্ন গবাদি পশুর দুধ খেয়ে অভ্যস্ত এবং সেই অতীত থেকে আজ পর্যন্ত মানব সভ্যতা জেনে এসেছে যে দুধ হল এক প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্যকর পানিয় তরল উপাদান । যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখ তে সাহায্য করে। বর্তমানে গবাদি পশুর দুধ গুলি বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রয় হচ্ছে । গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের দুধ মানুষ এখনো পর্যন্ত সমানভাবে পান করে চলেছে তবে গরুর দুধের থেকে ছাগলের দুধের প্রোটিন অনেক কম।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
Milk |
তাই গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও মহিষের দুধ এখন বেশ জনপ্রিয় পানীয় তরল উপাদান। আসুন দেখে নেওয়া যাক দুধে কি কি প্রোটিন বা ভিটামিন রয়েছে-
দুধের মধ্যে কি কি উপাদান আছে
ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ক্যালসিয়াম ,ভিটামিন ডি ,ফসফরাস ম্যাগনেসিয়াম, থায়ামিন ,রিভোফ্লা বিন, ভিটামিন B ১২, নায়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন c , কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ,লিপিড, ল্যাকটোজ ,ল্যাক্টিক অ্যাসিড, সোডিয়াম জিংক ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ ইত্যাদি রয়েছে।
আসুন দেখেনিই -কোন ভিটামিন কত পরিমাণে রয়েছে-পালমিটিক অ্যাসিড (16%), স্টিয়ারিক অ্যাসিড (32%), ওলিক অ্যাসিড (৪%) এবং লিনোলিক অ্যাসিড (36%)। দুধের প্রোটিন প্রধানত কেসিন দ্বারা গঠিত এবং নিম্নলিখিত হিসাবে বিভক্ত করা যেতে পারে: আলফা কেসিন (70%), বিটা কেসিন (10%) এবং কাপ্পা কেসিন (20%)। দুধের জল প্রধানত জল দ্বারা গঠিত এবং নিম্নলিখিত হিসাবে বিভক্ত করা যেতে পারে: ইথানল (2%-4%), ইথাইল অ্যাসিটেট (0.2%-1%) এবং জলীয় (97%)।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকেরই দুধের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা লক্ষ্য করা যায় । অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি শুধু দুধ খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকে ভাতের সঙ্গে দুধ খেতে পছন্দ করেন তাই আসুন দুধ আমাদের কোন কোন উপকার করে এবং কোন কোন অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করে তা আমরা এক নজরে দেখে নিই-
- ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দূর করে
ডিহাইড্রেশন জনিত কোন সমস্যায় ভুগলে যদি নিয়মিত দুধ পান করা যায় তাহলে এর থেকে প্রশম পাওয়া যাবে কারণ দুধ রিহাইড্রেট হতে সাহায্য করে।
- পিরিয়ডসের সময় পেটব্যথা দূর করে
অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন মহিলাদের পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা করে, এর কারণ হলো শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকে। দুধে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছেরাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা, তাই নিয়মিত রাতে দুধ পান করলে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
- পেশি গঠন করে
পুরো দুধটি স্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলির আকারে শক্তির একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা পেশীর ভরগুলিকে শক্তির জন্য ব্যবহার হতে বাধা দেয়।
এছাড়াও দুধ অনেক প্রোটিন যুক্ত তাই এটি মাংসপেশি গঠন হতে সহায়তা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে বেয়াম করে যদি নিয়মিত গরম দুধ পান করা যায় তাহলে ব্যথা অনুভব হবে না বরং পেশি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে,গরম দুধের উপকারিতা।
- হাড় ,চুল ও দাত মজবুত করতে
দুধে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ফসফরাস রয়েছে যা আমাদের হাড় ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে এবং মজবুত করে তোলে চুল কালো ও দাত শক্ত হতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
যেহেতু দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক রয়েছে তাই এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
- ত্বক সুন্দর রাখতে দুধের ভূমিকা
দুধ শুধু পান করলে ত্বক সুন্দর হয় না। এর পাশাপাশি দুধ নানা প্রক্রিয়ায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রলেপ দেওয়া গেলে শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে যেমন-
দুধ জাল দেওয়ার আগে কাঁচা দুধ একটু মুখে মেখে নিন কারণদুধে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHAs) থাকে, যা ছিদ্র বন্ধ করতে এবং ব্রণ ব্রেকআউট প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, দুধের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য বিরক্তিকর ত্বককে প্রশমিত করতে পারে এবং ব্রণের সাথে সম্পর্কিত লালভাব কমাতে পারে।
এছাড়াও নিয়মিত দুধ দিয়ে স্নানও করতে পারেন অথবা মুখ ও ধুইতে পারেন।
- চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
দুধে থাকা ভিটামিন ডি নতুন চুলের ফলিকল তৈরিতে সাহায্য করে তাই নিয়মিত দুধ পান করলে চুল কালো এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য হবে। এছাড়াও এটি যেহেতু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ তাই চুলের বৃদ্ধিতেও খুবই কার্যকরী।
- হজমে সাহায্যকারী
এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হজম শক্তিকে আরো সহজ করে তোলে এবং বিশেষ করে ভিটামিন বি থাকায় এটি খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে বিশেষ ভূমিকা ধারণ করে।
অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন মশলাদার খাবার খেলে আমাদের দেহের পাকস্থলীতে জ্বালা প্রদাহ দেখা যায় কিন্তু এই মশলাদার খাবার খাওয়ার পর দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় যদি এক গ্লাস দুধ খাওয়া যায় তাহলে পাকস্থলীর আবরণ জ্বালা থেকে রেহাই পাবে এবং অম্বল এসিডিটির হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
- গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায়-গর্ভাবস্থায় নিয়মিত দুধ পান করলে,শিশুর মস্তিষ্ক ও হাড়ের বিকাশ ঘটে এছাড়াও জন্মের পর শিশুর বুদ্ধির ভালোই বিকাশ ঘটে।
- ওজন কমাতে
দুধে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের বৃদ্ধিরতা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারে তাই নিয়মিত দুধ পান করলে ওজনকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে এক ব্যক্তি ৮০ কেজি ওজন অবস্থায় নিয়মিত প্রায় ছয় মাস দুধ পান করেছে এবং ফলস্বরূপ তার ওজন কমে ৬০ কেজিতে চলে এসেছে ।
- ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ
দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই দুধ নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো ।
সতর্কতা- দুধ খাওয়ার অপকারিতা
* যাদের শরীরে এলার্জি রয়েছে তারা দুধকে এড়িয়ে চলুন কারণ দুধে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আরো খারাপ রূপ ধারণ করাতে পারে।
* অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়- বদহজম হতে পারে। অধিক মাত্রায় দুধ খাওয়া উচিত নয় নিয়ম করে প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ পান করলে ভালো হয় ।
* যারা আলসারের রোগী তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয় কারণ এইসব রোগীদের দুধ খেলে পেটে ব্যথা সহ ডায়রিয়ার দেখা দিতে পারে।
* কিডনিতে পাথর থাকলে দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এতে আরো অন্য রোগের দিকে যেতে পারে।
* কাঁচা দুধ খাওয়া কখনোই উচিত নয় কারণ এই কাঁচা দুধ ছেলে আর্থাইটিস অথবা গ্যাসটাই ট্রিশ এর মত কঠিন রোগ দেখা দিতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে আট জন আর্থাইটিসের রোগী কোরোনার উপসর্গ নিয়ে হসপিটালে যান এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় এদের প্রত্যেকেরই কাঁচা দুধ খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাই কাঁচা দুধ খেলে আর তাই রোগ হতে পারে এটা পরিষ্কার।
আমাদের শেষ কথা-
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛📰Google News
দুধ খুবই উপকারী একটি সুসম পানিয় উপাদান তাই সুস্থ ও সবল থাকতে নিয়মিত দুধ পান করা উচিত শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি প্রত্যেকেরই অন্তত ২-৩ দিন পর পর দুধ পান করা উচিত এতে দেহের জোর অনেকটাই বাড়বে। তবে দুধে যেমন উপকারিতা ও আছে তেমনি অপকারিতাও আছে তাই কিডনিতে পাথর পড়া রোগীরা দুধ পান করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
Tags,