আদার উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের আলোচনা করবো আদার উপকারিতা ও অপকারিতা। জিঞ্জি বারেশি বংশের অন্তর্গত এই আদা হল একপ্রকার মসলা। এর বৈজ্ঞানিক নাম জিনজিবার অফিসিনালে। এই গাছের হলুদ ও সবুজ ছোট ছোট ফুল আছে। এর মূল কে বলা হয় রাইজোম যা রান্নার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগের মোকাবিলা করার জন্য ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।তবে শুধু ওষুধ নয় এছাড়াও নানারকম পানীয় নানারকম রূপচর্চার কাজেও এই আদাকে ব্যবহার করা হয়।
আসুন জেনে নিই আদার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অজানা কিছু কথা-প্রথম দিকে এই গাছ অস্ত্রোনেশিয়ান অঞ্চলের মানুষরা পালিত করেছিল বা পালন করেছিল। যদিও বলা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রের দিকে এই গাছ প্রথম জন্মভূত বা বংশভূত হয়েছিল। এই আদাকে আমরা বিভিন্ন পানীয় তারপর মিষ্টান্ন সবজির তরকারি সোডা ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারি প্রাথমিকভাবে তবে এটিকে যদি আমরা আরও বিশেষভাবে সুন্দর করে প্রতিস্থাপনা করে ব্যবহার করতে চাই তাহলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে আদার গুনাগুন।
- আদার ইংরেজি নাম কি
-Ginger (জিনজার)।
- আদার বীজ কোন ধরনের বীজ
-মশলা এবং ঔষধ জাতীয়
- আদার বৈজ্ঞানিক নাম কি
-জিঞ্জিবের অফিসানালে(Zingiber officinale)
আদার উপকারিতা ও অপকারিতা
আদার ছবি : |
আদার পুষ্টিগুণ:
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে আদা সকল রোগ নিরাময়ের দাদা। যেহেতু রোগ নিরাময়ের দাদা তাই এটিকে বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এর মধ্যে বর্তমান রয়েছে- ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ,সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ,ভিটামিন এ, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন ই ,ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ,ব্যাকটেরিয়া এজেন্ট,ফাইবার ,কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, শ্বেতসার , আঁশ,খনিজ, ক্যালোরি, আয়রন, নিয়াসিন, ফলেট,ফসফরাস, দস্তা, রিবোফ্লোবিন ইত্যাদি।
আদার উপকারিতা
দাঁতের উপকারে আদা:-
আদার মধ্যে gingerols নামে একটি সক্রিয় উপাদান পাওয়া গেছে যা আমাদের দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ এর হাত থেকে বাঁচায় ।যেমন - মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেলে মাড়ি ফুলে ওঠে এবং ব্যথা হয় এই রোগের নাম পিরিওডোন্টাল ডিজিস ।এই রোগ কমে যায় আদার ব্যবহারের মাধ্যমে তবে আদা নিয়মিত ব্যবহার করলে দাঁত ও সাদা দেখায়।
পেট ফোলা কমাতে আদা:-
প্রাকৃতিকভাবে আদাতে আন্টি ফ্লেমেটরি কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা মানুষের পেট ফোড়া সহ জ্বালা যন্ত্রণার মত সমস্যাকে সহজেই নিরাময় করতে পারে। এই কারণে এই সমস্যায় আদা ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্দি কাশি কমাতে-
আদাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। গলায় ব্যথা এবং কাশি সর্দির মতো সমস্যায় সমাধান আনে আদা।
---সর্দি কাশি কেন হয় এবং দূর করার ঘরোয়া উপায়
পেশির ব্যাথা:-
কোনো কারণে পেশিতে ব্যাথা হলে নিয়মিত আদা খাওয়া যেতে পারে। এতে একটু দেরি হলেও সময়ের সাথে সাথে কমে যায়। এবং এটি প্রমাণিত।
বমি ভাব কমাতে আদা:-
বিভিন্ন ধরনের বমি ভাব প্রেগন্যান্সি ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে হওয়া বমি ভাব ,মাথা ঘোরা এক নিমেষে কমে যাবে আদা সেবনে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে:
বৈজ্ঞানিক এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত আদা খাওয়া ব্যক্তির খিদে কমিয়ে দেয়। এবং পরিপাকে হস্তক্ষেপ করে এতে শরীরের লিপিড বেড়ে যায় এবং উষ্ণতা ও বেড়ে যায় ফলে শরীরের ওজন ধীরে ধীরে গলতে থাকে।
হজমে সহায়তা করে:
এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের শরীরে হজম ব্যবস্থাকে সহজ করে দেয়। অন্ত্র থেকে খাবার শুষে নিয়ে পাকস্থলীর গ্যাস কমায়।
মাসিকের সমস্যা:
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ঋতুস্রাবের আগের তিনদিন ও প্রথম দুইদিন যদি আদা নিয়ম করে খাওয়া যায় ।তাহলে ঋতুস্রাবের সময় হওয়া পেটের যন্ত্রণা কমে যাবে এবং রক্তক্ষরণ অনেকটা কমে যাবে।
আদার ঔষধি গুন
- আদা একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ যা আমাদের ধমনীতে রক্তের গতি কমায় ফলে রক্তচাপ কমে যায়।
এবার আসুন জেনে নিই আদা কি কি নিয়মে খাওয়া যেতে পারে- আদার খাওয়ার নিয়ম
- আমরা আদা প্রথমত কাঁচা চিবিয়ে এবং চায়ের সঙ্গে খেতে পারি।
- এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য আদার রস ও মধু দিয়ে গরম জল করে খেতে পারি। এতে আমাদের উপকার হবে।
- আদা বিভিন্ন তরকারির সাথে মসলা হিসেবেও খাওয়া যায়।
- আদা ভালো করে ধুয়ে কেটে গুঁড়ো করে শুকিয়ে রাখা যায় এতে এই শুকনো আদা যদি আমরা গরম ভাতের সঙ্গে খায় আমাদের বিভিন্ন রোগ কমে যাবে।
সতর্কবার্তা- আদার ক্ষতিকর দিক
তবে অতিরিক্ত আদা খাওয়াটা কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না। তাছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ রোগ এবং প্রেগনেন্সি রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে আদা নিয়মিত খেতে পারেন।আদার উপকারিতা ও অপকারিতা।
আর হ্যাঁ ভারত বর্ষ এবং বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশেও এখন আদা চাষ সম্ভব হচ্ছে তবে এক্ষেত্রে মাটি এবং আবহাওয়ার দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার।
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛ Google News