সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
সজনে পাতা ভারত বর্ষ সহ বাংলাদেশের একটি উপকারী এবং জনপ্রিয় সবজি। সজনে পাতার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলেই ফেরা।
এই গাছ ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত এই গাছের ডাল রোপণ করার উপযুক্ত সময়।এই সজনে গাছের ফল ফুল পাতা সহ এই গাছের রসও আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি।
গবেষকরা সজনে পাতাকে বলে সুপার ফুড এবং সজনে গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি। সজনে গাছের ফল/ডাটা যেমন আমাদের উপকারী তেমনি শজনে গাছের পাতাও আমাদের বিশেষ উপকার করে।
সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম, সজনে পাতার ব্যবহার, সজনে পাতার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
সজনে গাছের পাতায় বেশি বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে সেগুলি হল-বিপুল পরিমাণে খনিজ পদার্থ ,ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ,জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। সজনে পাতায় এতগুলি উপকারী প্রোটিন এক সঙ্গে থাকার কারণে আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের সাথে সাথে উপকার ও হয়। এছাড়াও এতে পাওয়া গেছে নিকোটিন এসিড ও চর্বি জাতীয় পদার্থ।
১০০ গ্রাম সজনে পাতায় যা যা ভিটামিন পাওয়া যায় সেগুলি হল-স্নেহ ১.৪০ গ্রাম
প্রোটিন ৯.৪০ g
ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম
লৌহ ৪.০০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ প্রায় ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম
সজনে পাতার ব্যবহার, সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
তবে এটি খাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো-
>>>সজনে পাতার গুঁড়ো। সজনে পাতা ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে এবং শুকনো কড়াই অল্প আছে হালকা টেলে নিয়ে গুঁড়ো করে নিলে অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
এবং এই গুঁড়ো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
>>>সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা, মধু, লেবুর রস ও সজনে পাতার গুড়ো দিয়ে এক প্রকার শরবত বানানো হয় যা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক মাত্রায় বেড়ে যায় এবং আমাদের শরীর আবহাওয়া জনিত অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
>>>সালাদ হল এমন একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট যা আমাদের শরীরের বায়োলজিক্যাল প্রপার্টিজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শসা গাজর পেঁয়াজ যে কোন সালাদের সঙ্গে যদি আমরা সোজনে পাতার গুঁড়ো অল্প পরিমাণে মিশিয়ে দিই তাহলে সেই সালাদ যতটা সুস্বাদু হবে তার থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
>>> সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম, রান্নায় মসলা হিসাবে ও বিভিন্ন ভাজির সঙ্গে এই গুড়ো খাওয়া যেতে পারে।
>>>সজনে পাতার ব্যবহার, গরম ভাতের সঙ্গে এই সজনে পাতার গুঁড়ো খাওয়া যেতে পারে।
>>>কাঁচা সজনে পাতার রস আমরা যদি নিয়মিত পান করি তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ কমে যাবে।
>>>এছাড়াও সজনে পাতা ভাজা, ভর্তা অথবা রান্নাও করা যায়।
সজনে পাতার উপকারিতা
এবার আসুন জেনে নিই সজনে পাতা খেলে আমাদের শরীরের কি কি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়াও বলা হয় সজনে পাতাতে কলার চেয়ে বেশি পাঁচ গুণ বেশি পটাশিয়াম ও দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম , ডিম এর চেয়ে দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে দুই গুণ বেশি ভিটামিন বিদ্যমান যা আমাদের শরীরের অন্ধত্বসহ আরো বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। হাতিয়ার হিসেবে সজনে পাতা বিভিন্ন ঔষধে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়।
>>>এই সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়ার এনজাইম গুলিকে সচল রাখে ফলে সুস্থভাবে হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
>>>সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
>>> এই সজনে পাতায় অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের দেহের রক্ত চলাচলকে পরিষ্কার রাখে এবং ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করে।
>>>বহু গবেষণায় দেখা গেছে সজনে পাতায় প্রদাহ বিরোধী পদার্থ থাকে, যার কারণে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার, আলসার ইত্যাদি রোগ অব্যাহত থাকে এই সজনে পাতা সেবন করলে।
>>>এক এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে ১০ জন হাঁটুর ব্যথাযুক্ত মানুষের নিয়মিত সজনে পাতার জুস ভর্তা ও তরকারি খাওয়ানোর প্রায় একমাস পর প্রায় আট জন মানুষের হাঁটুর বাতের ব্যথা কমে গেছে। তাই সজনে পাতা খেলে হাঁটুতে থাকা বহু পুরনো বাতের ব্যথা কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
>>> যাদের পেট পরিষ্কার হয় না, তাদের জন্য একটা ছোট্ট উপদেশ তারা যদি প্রায় নিয়ম করে শোজনে পাতার জুস খান তাহলে তাদের পেটের জমানো বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে যাবে।
>>> এই পাতায় ফাইটোোকেমিক্যাল রয়েছে যার রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সক্ষম। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বিভিন্ন কোষের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
>>>sajne patar upokaritaসজনে পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হৃদপিণ্ডের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে স্বাভাবিক রাখে। এবং রক্তের ধমনীতে প্লেগ গঠনে বাধা দিয়ে হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভাবনা কমায়।
>>> এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল রয়েছে যা বিভিন্ন সংক্রামক এর আক্রমণ থেকে বাঁচায়।
>>> উপরিউক্ত সজনে পাতার উপাদান গুলি আমাদের ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা, চোখ দাঁত হাড় এবং ইত্যাদি মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখের দৃষ্টি শক্তি পরিষ্কার রাখে।
>>> সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্য থেকে আয়রনের ঘাটতি পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ঘটায় সজনে পাতা।
>>>গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা, বাচ্চা প্রসবের পর মায়েরা যদি নিয়ম করে সজনে পাতা খান তাহলে তাদের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে কারণ সজনে পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ,আয়রন সহ আরো নানারকম উপকারী উপাদান।
সাজনা পাতা খাওয়ার সতর্ক বার্তা
সতর্কবার্তা-সজনী পাতাতে বিশেষ কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবুও সজনে পাতা নিয়মিত না খেয়ে দু একদিন পরপর খাওয়া ভালো। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা সজনে পাতার গুড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন প্রকার ভেজাল সজনে পাতার গুড়া বিক্রি হচ্ছে তাই ফ্রেশ সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার জন্য নিজেরাই বাড়িতে তৈরি করুন সজনে পাতার গুড়া এতে অনেক উপকার হবে।
অবশেষে এটাই বলব যে আপনারা সজনে পাতা নিয়মিত খেতে পারেন আপনাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কারণে তবে যাদের অত্যাধিক পরিমাণ ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তবে খাবেন।
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛📰Google News
Tags,
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা