চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা
রোজা বিশেষত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ প্রবিত্র ইবাদত ,যার মাধ্যমে মানুষের অনেক উপকার সাধন হয়ে থাকে। রোজার নিয়ম হলো -ভোর ৩ টার সময় উঠে নির্দিষ্ট নিয়ত ও দোয়া পাঠের সাথে
(রোজা রাখার নিয়ত : নাওয়াইতু-আন আসছুমা-গাদামিন শাহরী রমযানাল মুবারক ফারজাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাছ ছামিউল আলীম
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আগামীকাল রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ বা নিয়ত করিলাম )
সেহেরি (খাবার ও পর্যাপ্ত পানি )খেয়ে নিতে হবে ,এর পর সারা দিন কোনো পানি অথবা খাবার খাওয়া যাবেনা ,তবে সন্ধ্যা অথবা মাগরিব এর আজান শুনে নির্দিষ্ট দোয়া পাঠের সাথে ইফতার (পানি ও পর্যাপ্ত খাবার )খেতে হবে।
(রোজা খোলার নিয়ত বা ইফতারের দোওয়া :
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু
বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ
: হে আল্লাহ আপনার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার প্রদত্ত খাদ্য দ্বারা ইফতার
করছি। ) অবশ্য রোজা পালনের সাথে সাথে সারাদিন নামাজ আদায় করতে হবে অবশ্যই।
আমাদের অন্য পোস্ট : খেজুরের উপকারিতা (নারী ও পুরুষের যৌন শক্তিতে, বার্ধক্য রোধে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়)
ইসলামিক দিক দিয়ে রোজার উপকারিতা
রোজা হলো ইসলামের তৃতীয়
স্তম্ভ ,হাদীছে নামাজ এর পরেই রোজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা(রা :) থেকে বর্ণিত -আল্লাহ রসূল (সা :)বলেন ,রমজান উপস্থিত হলে জান্নাতের দ্বার সমূহ কে উন্মুক্ত করার সাথে সাথে দোজখের দ্বার সমূহকে রুদ্ধ করা হয় ,আর সকল শয়তান কে করা হয় আবদ্ধ। (সহী বুখারী ১৮৯৯)
এছাড়া অন্য হাদীছ রাসূলুল্লাহ (সা:)হাদীছে কুদসীতে বর্ণনা করেন ,মহান আল্লাহ তালা ইরশাদ করেন ,রোজা আমার জন্য আর আমি নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দান করব।
বিশ্ব জগতের মহান বিজ্ঞানী হজরত মোহাম্মাদ (সা:)বলেন যে ,প্রতিটি বস্তুর জাকাত আছে ;শরীরের জাকাত হলো রোজা। অতএব ,আমাদের রোজা রাখা উচিত।
ইসলামিক মতানুসারে ,রোজা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের অনেক মাধ্যম। এছাড়া রোজা অবস্থায় মানুষ গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং মনের চিন্তা ,একঘেয়েমি ও নফরমানি সহজে আসেনা। সেই কারণে নবী হজরত মোহাম্মদ (সা:)এক হাদীছে ইরশাদ করেছেন যে ,হে যুব সম্প্রদায় তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ আছে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয় ,কারণ বিবাহ দৃষ্টি অবনত করার ও লজ্জা স্থান সংরক্ষণে বিশেষ সহায়ক। আর যে বেক্তি বিয়ে করতে অক্ষম সে যেন রোজা রাখে ,এটি যৌনতা নিবারণে সহায়ক ,(বোখারী শরীফ :৫০৬৫)
আমাদের অন্য পোস্ট : প্রেমময় দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য ইহকাল ও পরকালের বিশেষ কল্যাণ বয়ে আনে ,মুসলমানরা এই মাসে সারাদিন না খেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের
চেষ্টা করে তাই বিশেষত এরা সমস্ত বিবাদ ,ঝগড়া ,মিথ্যাচার সহ যত অন্যায় কাজ এর থেকে দূরে থাকার জন্য নিজেদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই জন্য একটা মানুষ যখন রোজা রাখে তখনি তার মানসিক ,শারীরিক ও আধ্যাত্বিক উন্নতি ও ঘটে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা প্রমাণিত। মুসলমান গণ রোজা পালনে পরকালের কল্যাণের আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের
সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন মরণ ব্যাধি থেকে আরোগ্যলাভ ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
প্রসঙ্গত বলা যায়,ইতালির বিখ্যাত শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলা ৯০ বছর বয়স হওয়া সত্বেও সুস্বাস্থের অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে তিনি ভালো কর্মক্ষম ও কর্মঠ ছিলেন ,এর কারণ জিজ্ঞেস করে তিনি বলেন - তিনি বলেন তিনি নাকি অনেক বছর আগে থেকে এ রোজা পালন করে এসেছে ,এবং তিনি প্রতি মাসে এক সপ্তাহ করে এবং বছরে এক মাস করে রোজা পালন করতেন।
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛📰Google News
মহান সৃষ্টি কর্তা রোজার অনেক ফজিলত রেখেছেন যা বিশেষ ভাবে প্রমাণিত।
প্রমান ১-
জার্মান ডাক্তার ফেডারিক হ্যানিম্যান প্রমান করেন যে -রোজা পালনে মৃগী রোগ ,আলসার ,পেটের অসুখ ,গ্যাস্ট্রিক ,বদহজম ইত্যাদি রোগের নিরাময় সম্ভব।
প্রমান ২-
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.পিজি স্পাসকি বলেন - রোজার বিনিময়ে কালাজ্বর সহ শরীরের পুরাতন রোগের নিরাময় সম্ভব।
প্রমান ৩-
১৯৫৯ সালে মস্কো বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিটার ভেনিয়ামিনভ রোজার উপকারিতা নিয়ে অনেক গবেষণার পর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন সেই রিপোর্টে তিনি সরাসরি দেখিয়েছিলেন যে কমপক্ষে সপ্তাহে একদিন রোজা রাখলে পরিপাকতন্ত্র একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশ্রাম পায় যা পরবর্তীতে সঠিক ভাবে কাজ চালাতে অনেক বেশি সক্ষম হয়। রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, এতে পরিপাকের নূন্যতম সমস্যার সমাধান আপনিতেই হয়ে যায়।
প্রমান ৪-
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড এ বিষয়ে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বলেন যে -রোজা পালনকারী বেক্তি দৈহিক খিঁচুনি ও মানসিক অস্থিরতা র মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়না , বরং ব্যক্তির দেহ বরং তার বাহ্যিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে,কারণ প্রত্যে দেহের আবর্তন ও বিবর্তন বিদ্যমান তাই এতে মনবিষয়ক বা মস্তিস্ক জনিত রোগ নির্মূল হয়।
প্রমান ৫-
বিখ্যাত ড. ক্লিভ তার 'পেপটিক আলসার 'নামক গবেষনা মূলক বইতে লিখেছেন -ভারত ,বাংলাদেশ ,পাকিস্তান ,আরব প্রভৃতি দেশ গুলিতে মুসলিম ধর্মাবলম্বী দের বসবাস তাই অন্য সব দেশের তুলনায় এই দেশ গুলিতে পেপটিক আলসার রোগের আক্রমণ অনেক কম,কারণ এরা রোজা বা সিয়াম পালন করে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন -সিয়াম(রোজা ) কোনো রোগ সৃষ্টি করেনা।
প্রমান ৬-
ড. আলেগ হিগ বলেন যে ,রোজাদার ব্যক্তির কিছু কিছু অনুভূতি বর্ধিত হওয়ার সাথে সাথে মানসিক শক্তির বিকাশ সাধন হয় ,স্মরণ শক্তি ও যুক্তি শক্তির প্রাদান্যতা বৃদ্ধি পায়।
রোজা রাখার উপকারিতা
১.ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে রোজা
ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অসংক্রমক
রোগ যা পুরো পৃথিবীতে প্রচুর পরিমানে অসুস্থতা ও মৃত্যু হার বাড়িয়ে চলেছে ,তবে পৃথিবীর মধ্যে প্রায় ৯০ %ডায়াবেটিস রোগীই হলো মুসলমান সেক্ষেত্রে ,রোজার মাসে বেশির ভাগ প্রশ্নই উঠে আসে তবে এ বিষয়ে বলবো সবার আগে ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো। তবে অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্যালোরি গ্রহণে মণ করে থাকেন ডাক্তার সেক্ষত্রে রোজা রাখলে ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমতে পারে বলে ওমান করা যায়। আর যারা ইন্সুলিন নিয়মিত গ্রহণ করেন তাদের জন্য বলবো - এক্ষেত্রে রোজা না রাখাই ভালো।
আমাদের অন্য পোস্ট : ডায়াবেটিস কি,এর লক্ষণ,চিকিৎসা ও রোগীর খাদ্য তালিকা
২. মানসিক চাপ কমাতে রোজা
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানসিক চাপের মুখ মুখী হচ্ছে প্রায় ৯৯ % মানুষ আর এই কারণে প্রিয় মানুষের উপ খিট খিটে মেজাজের প্রয়োগ করে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই ,আবার কেউ কেউ তো এই কারণে ভালো সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছেন। রোজার উপকারিতা, জন্য বলবো নিয়মি সপ্তাহে একদিন রোজা রাখুনা এতে মানসিক স্ট্রেস কমবে ,কারণ অনেক্ষন ক্ষুদার্থ থাকলে এড্রিনালিন গ্রন্থি থেকে কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন কমে যায় এতে মানসিক চাপ কমায় ও মস্তিষ্কে নতুন কোষ বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও নিয়মিত রোজা রাখার ফলে চিনি ,লবন ইত্যাদি কম খাওয়া হয় এতে মস্তিষ্কের স্ট্রেস অনেখানি কমে। রোজা রাখার
ফলে রক্তে 'এন্ডোরফিন্স 'নামক হরমোনের বৃদ্ধি হয় যা মানুসিক প্রশান্তির অনুভূতি দেয়।
আমাদের অন্য পোস্ট : ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির সহজ উপায়
৩.হজমশক্তি বৃদ্ধিতে রোজা
বর্তমানে নানান রকম লোভনীয় খাবার খাওয়ার ফলে অল্প বয়সে আমাদের
হজম তন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয় ,তবে এই সমস্যা দূর করতে যা বিনা ঔষধে। যা হলো ৩০ দিন রোজা পালন এই রোজা পালনে আল্লাহ তালা অনেক ফজিলত দিয়েছেন তার মধ্যেই একটি হলো হজম সমস্যার সমাধান। অনেকক্ষন না খাবার ফলে আমাদের হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং লিভার থেকে এনজাইম নামক একপ্রকার ক্ষরণ নিঃস্বরণ হয় যা শরীরের অতিরিক্ত
চর্বি ও কোলেস্টেরলকে ভেঙে বাইল নামক একটি এসিডে রূপান্তর করে যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাকস্থলী ও অন্ত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেয়।
আমাদের অন্য পোস্ট : খিদে না পাওয়ার কারণ ও খিদে পাওয়ার উপায়
৪.স্থুলতা কমাতে রোজা
সঠিক নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে এবং সংযম ঠিকঠাক রাখলে রোজার অনেক সুফলাফল পাওয়া যায় তা তো আমরা সবাই জানি তবে এর মধ্যে অন্যতম হলো ওজন কমানো বা স্থূলতা হ্রাস ,হ্যাঁ রোজা পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির
সাথে সাথে যারা অতিরিক্ত
মোটা তারা এই সুযোগে নিজের অতিরিক্ত ওজন ও কমিয়ে ফেলতে পারি সময় খেয়ে থাকার জন্য অতিরিক্ত চর্বি ক্ষয় হতে থাকে।
এতে অতিরিক্ত জমে থাকা রিজার্ভ কোলেস্টেরল শরীরের অন্যান্য জ্বালানিতে ক্ষয় হাওয়ায় রক্তের সার্কুলেশন
দেহের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায়। রোজার ফজিলত, একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে কোনো ব্যাক্তি ১-৩ দিন পর্যন্ত রোজা রাখার ফলে আমাদের দেহের মাংসপেশির গ্লাইকোজেন ,যকৃতের গ্লাইকোজেন থেকে শক্তি পেয়ে থাকে এবং ৩-৪ দিনের মাথায় আমাদের দেহের মাংসপেশির গ্লাইকোজেন ,চর্বি স্টোরেজ থেকে শক্তি পেয়ে কিটোসিস মোড এ পরিবর্তিত হয়।
আমাদের অন্য পোস্ট : পেটের মেদ এবং ওজন কমানোর উপায়
এইভাবে ৩০ দি সঠিক নিয়ম মেনে রোজা পালন করতে থাকলে একজন ব্যাক্তির শুধু মাত্র পেশির অতিরিক্ত চর্বি ২ পাউন্ড পর্যন্ত কমে যায় ,সেই ভাবে একজন ব্যাক্তির ৩০ দিনে সারা শরীরের মোট ৭ পাউন্ড পর্যন্ত অতিরিক্ত চর্বি কমানো সম্ভব। আর যারা প্রতিদিন জিম অথবা এক্সারসাইজে অভস্ত তাদের জন্য বলবো নিয়মিত রোজা পালনের সাথে নামাজ আদায় করুন এতে এক্সারসাইজ না করেও ১০০ %রিদম এক্সারসাইজের ফলাফল পাওয়া যাবে। আর হ্যাঁ রোজা পালনে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে সেহেরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে কারণ এটাই সুস্থ্য থাকার চাবিকাঠি। আর রোজার মাস ছাড়াও এমনি যে কোনো সসময় আপনি রোজা রাখুন আপনার দেহের গঠনমূলক ঠিক থাকবে।
রোজার নিয়ত,
রোজা রাখার নিয়ত,
রোজার উপকারিতা,
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা,
রোজার উপকারিতা কি,
রোজার ফজিলত,