ছাত্রজীবনের গুরুত্ব, দায়িত্ব ও কর্তব্য
ছাত্রজীবনের গুরুত্ব, দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
"ছাত্র জীবন হলো সোনালী সময় যে সময়ে সোনার কোনো দরকারই পড়ে না"
— আলকা টিওয়ারি
ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ- অর্থাৎ অধ্যয়ণ ছাড়া ছাত্র জীবন অসম্পূর্ণ, প্রত্যেকের ছাত্র জীবন অতিমূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ সময় এই সময়টি তপস্যা এবং ধ্যান করার মাধ্যমে অতিবাহিত করাই উত্তম।
শিক্ষার
কোনো শেষ নেই জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থী, কিন্তু পুঁথিগত শিক্ষায় বাল্যকাল থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গন্ডির মধ্যে সময়টুকু হলো ছাত্রজীবন। এই সময় প্রতিটি
শিক্ষার্থীর জন্য অতিমূল্যবান সময় কারণ শিশুর ভবিষ্যত কেমন হতে পারে নির্ভর করে ছাত্র জীবনে সে কেমন প্রস্তুতি
গ্রহণ করেছে।
আমাদের অন্য পোস্ট- ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় ও মূলমন্ত্র কী
প্রতিটি শিশুর মন মানসিকতা নরম কাদার মতো থাকে, নরম কাদামাটি নিয়ে যেমন বস্তু তৈরী করা যায় ,আপনি চাইলে কলস বানাতে পারেন আপনি চাইলে মালসা তৈরী করতে পারেন। ঠিক তেমনি শিশুর মন কাদামাটির মতন থাকে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা যেমন ভাবে তাকে চালনা করবে ঠিক তেমনি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই শিশুর ছাত্রজীবনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় ভবিস্যতে ভালো কিছু আশা করার জন্য।
তাই
প্রতিটি অভিবাক এর দায়িত্ব শিক্ষার্থীর
শূন্য মনে দায়িত্ববোধ ,জ্ঞান , সৌজন্যতামূলক প্রেরণ করা যাতে সেই ছাত্র মানুষের মতো মানুষ হয়ে বড়ো হয়ে হতে পারে।
ছাত্ররাই দেশের গর্ভ, দেশের মেরুদন্ড, ছাত্রসমাজের দিকে তাকিয়ে থাকে দেশ, তাদের সৌজন্যতামূলক
কর্ম, নৈতিকতা, শিষ্টাচার, দায়িত্ব , কর্তব্য , দিয়ে দেশের এবং দশের পরিবর্তন করে তোলে,
সুখী করে, সৌন্দর্যতা প্রদান করে।
আমরা
শক্তি আমরা বল
আমরা
ছাত্রদল
মোদের
পায়ের তলায় মূর্চে তুফান
ঊর্ধ্বে
বিমান ঝড় বাদল
আমরা
ছাত্রদল।
– কবি কাজী নজরুল ইসলাম
ছাত্রজীবনের গুরুত্ব
প্রতিটি ব্যাক্তির ছাত্রজীবন গুরুত্বপূর্ণ সময়, জীবন গঠনের জন্য সৰ্বোৎকৃষ্ট সময় হলো ছাত্রজীবন। এই মূল্যবান সময়ে কেবলমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা ছাড়াও আচার আচরণ, জ্ঞান গম্ভী, দায়িত্ব, কর্তব্য, সৌজন্যতামূলক শিক্ষা যত বেশি রপ্ত করতে পারবে যে ছাত্র সেই ছাত্রের ভবিষ্যত ঠিক ততটাই শক্তিশালী হতে শুরু করে। জীবন উজ্জ্বল হয়, জীবনে সুখানুভুতি আসে, একটি ছাত্র ব্যাক্তিগতভাবে উন্নতি লাভ করলে , সেটা কেবলমাত্র তার ব্যাক্তিগত হিসাবে গণ্য হয় না সমাজের জন্য দেশের জন্য সে গৌরব ,উজ্জ্বল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী সম্মান পায়।
ছাত্রজীবন হলো তোমার জীবনের বীজ, এটাকে ভালোভাবে বপন করতে হবে। — প্রবাদ
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ছাত্রজীবনটি যদি ভবিষ্যতের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এই জীবনের কতো নিখুঁত দায়িত্ব আছে কতো কর্তব্য আছে সেগুলি প্রতিটি ছাত্রের জানা অবশ্যই দরকার আছে। আর আজকের আলোচনার বিষয় হলো ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা।
১. জীবনের লক্ষ্যে জ্ঞানার্জন
ছাত্রদের
প্রধান দায়িত্ব হতে হবে নির্দিষ্ট কোনো একটি লক্ষ্যকে স্থির করে সেই পথে এগিয়ে যাওয়া। ওই পথে যতরকম জ্ঞানার্জন করতে
হয় সব গুলিকে আয়ত্তে আনা তার কর্তব্য। এই বিষয়ে ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো
বলেছেন -
“লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের পরিকল্পনা
দিয়ে তৈরী গাড়িতে চড়তে হবে। এটার ওপর আমাদের পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস রেখে নাছোড় বান্দার
মত এগিয়ে যেতে হবে, এটা ছাড়া সাফল্যের আর কোনও
পথ নেই”
তাছাড়া
অন্য একটি পজিটিভ লেখকের চিন্তাভাবনায় - তিনি বলেছেন
“সব সফল মানুষেরই লক্ষ্য থাকে, গন্তব্য
না জানলে যেমন সেখানে পৌঁছানো যায় না, একজন মানুষ কি করতে চায় অথবা কি হতে চায় – তা
না জানলে তা করার বা হওয়ার কাজ শুরু করতে পারে না”
আমাদের অন্য পোস্ট- প্রতিদিন বই পড়ার গুরুত্ব, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
২. চরিত্র গঠনে দায়িত্ব ও কর্তব্য
পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠতম জীব হলো মানুষ এবং আচার আচরণ জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক সমস্ত প্রাণীর উর্ধে। তাই
প্রতিটি ব্যাক্তিদের মধ্যে মনুষত্য বোধটুকু থাকা আবশ্যিক, মানুষ রুপি সভ্য সমাজের অনেক
পশুর আচার আচরণ পাওয়া যায়। এমন নিকৃষ্ট ব্যাক্তিদের মনুষত্ব থাকে না।
অতএব
মানুষের স্বভাব আচরণ বলে দেয় তার চরিত্র কেমন।
সমাজে এই রকম লক্ষ করা যায় উচ্চ ডিগ্ৰী ধারী
মানুষ কিন্তু তাদের আদব কায়দা পশুদের থেকে ও অনেক নিচে। ছাত্রজীবনে প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর
জন্য দায়িত্ব থাকে শিক্ষার পাশাপাশি তার চরিত্রটি যেন সুন্দর, সভ্য হয়। সর্বপ্রথম কথাবার্তায়
দিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ মানুষের চরিত্র ভালো হলে তার কথা বার্তা সুন্দর, নম্র, ভদ্র,
বিনয়ী হয়ে থাকে।
৩. সমাজে ছাত্র ছাত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
মানব
জাতি সামাজিক নিয়ম নীতি মেনে চলে, তাই সমাজের বিশাল একটি অঙ্গ হলো ছাত্রসমাজ। আর এই
ছাত্রছাত্রীদের সমাজের প্রতি যেমন দায়িত্ব, কর্তব্য আছে ঠিক তেমনি সমাজ এই ছাত্রছাত্রীদের আশায় থাকে। কারণ সমাজ এইটা ভালোভাবে জানে সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে একমাত্র
ছাত্রসমাজ ভালোভাবে পারবে।
তাই
প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর উপর এই দায়িত্ব টুকু থাকা উচিৎ, যে অসামাজিক, অনৈতিক কাজকর্মের
বিরুধ্যে রুখে দাঁড়ানো। সমাজের প্রতি খেয়াল করা সমাজকে ভালো কিছু দেওয়া একটি ছাত্রের
দায়িত্ব। এই সমাজের কোলে ছাত্র ছাত্রীরা বড়ো হয় তাই ছাত্ররা সমাজের কাছে চির ঋনী, তাই
এই সমাজকে তার প্রতিদানমূলক সমাজসেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা ছাত্রজীবনের দায়িত্ব
ও কর্তব্য।
৪. স্বাস্থ্য রক্ষায় ছাত্র জীবন
স্বাস্থ্য-ই হলো সম্পদ, আর এই সম্পদ রক্ষা করা প্রতিটি ছাত্র
ছাত্রীর দায়িত্য ও কর্তব্য। বৌদ্ধ্য ধর্মের ধর্মগুরু বুদ্ধদেব বলেছেন -“শরীরকে সুস্বাস্থ্যের
মধ্যে রাখা একটি কর্তব্য.. অন্যথায় আমরা আমাদের মনকে শক্তিশালী এবং পরিষ্কার রাখতে
সক্ষম হব না।” আমার মনে হয় কেউ অন্নকাজের জন্য নিজের স্বাস্থকে বিসর্জন
দেয় তার মতো মূর্খ দ্বিতীয় আর নেই।
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛📰Google News
তাই
প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর সু সাস্থের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে
, তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো প্রয়োজন এবং খাদ্য তালিকায় সুষম পুষ্টিকর খাদ্য
রাখা উচিত সাথে সাথে প্রতিটি অভিভাবকের ও খেয়াল রাখতে হবে।
৫. খেলাধুলায় ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ছাত্র
জীবনে যেমন শিক্ষার প্রয়োজন ঠিক তেমনি খেলাধুলোর ও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা উপরে জেনে এসেছি
স্বাস্থ হলো সম্পদ আর এই সাস্থ রক্ষা করার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন আছে। ব্যারন পিয়ারে
দ্যা কুবার্তো ভাষায় -খেলাধুলা না করলে নিছক বিদ্যা অনুশীলনে যৌবনের উদ্যম, শক্তি ও
কর্মক্ষমতার অপচয় ঘটবে।
সংগ্রামী
জীবনে মানুষকে উপযুক্ত করে গড়েতোলার জন্য খেলাধুলার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্য।
শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় খেলাধুলাতে জীবনের
প্রথম থেকেই উদ্যোগী হওয়া দরকার, এর সুফল সারাজীবন ধরে ভোগ করা যায়। বিশেষ করে শিশুদের
মানসিক প্রসারের জন্য তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা ও পর্যাপ্ত পরিমান খেলাধুলা করার সুযোগ
করে দিতে হবে।
আমাদের অন্য পোস্ট- ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
৬.ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক ও দেশাত্মবোধ
প্রতিটি
ছাত্রের দেশ প্রেম থাকতে হবে, নিজস্য দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে তার জন্য প্রয়োজন
ইতিহাস থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া। দেশের অর্থ, দেশের সম্পদ যাতে অক্ষুন্ন থাকে তার জন্য
প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে রাজনীতিতে যোগদান করতে হবে।
বিশেষ
করে গণতন্ত্র রাষ্ট্রের সাধারন মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি যাতে আস্থা রাখতে পারে তার জন্য
অগণতান্ত্রিক কোনো কাজকে সম্মতি না দিয়ে তার বিরুধ্যে ছাত্র সমাজ কে এগিয়ে আসতে হবে।
ভালো রাজনীতিদিয়ে সমাজ রাষ্ট্র পরিবার দেশ
পরিবর্তন করা যায়, হযরত আলী (রাঃ ) বলেন -রাজ্যের পতন হয় যখন রাজ্য থেকে সুবিচার
উঠে যায়।
৭. শিক্ষক গুরুজন ও পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
শিক্ষক
গুরুজন ও পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব ছাত্র ছাত্রীদের বেশ গুরুত্যপূর্ণ অধ্যায়। এদের
মাধ্যমেই একজন ছাত্র লালন পালন হয়ে থাকে এনাদের ঋণ একজন ছাত্র সারাজীবনে কোনো কিছুর
মূল্যে পরিশোধ করতে পারবে না। তাই যতটা পারা যায় ভক্তি শ্রধা দিয়ে এনাদের আশীর্বাদ
মাথায় নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া।
আমাদের
দেশনায়ক এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছেন - "তিনজনে পারে একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে
তারা হলেন বাবা ,মা ও শিক্ষক। " তিনি আরো বলেন -”যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয়
এবং সবার মধ্যে সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার
সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা
ও শিক্ষক।”
শেষ কথা
ছাত্ররা
দেশের সৈনিক ছাত্ররা পারে সব কিছুকে পরাজয় করতে, আজ যারা শিশু আজ যারা শিক্ষার্থী দুদিন
পরে তারই হবে দেশের, সমাজের, রাষ্ট্রের হাতিয়ার। সমাজ এবং দেশের ভবিষ্যত উন্নতি, অবনতি
নির্ভর করে তরুণ ছাত্র সমাজের উপর। ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য, ন্যায়, সত্য, সততা
দিয়ে দেশের এবং দশের জন্য বিনা স্বার্থে কাজ করে দেশ কে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেওয়া।
কোনো রকম অসামাজিক মূলক কাজে জড়িয়ে না যাওয়া যার ফল স্বরূপ দেশের এবং দশের ক্ষতির আশংকা
থাকে।
আমাদের অন্য পোস্ট-ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের পাঁচটি উপকারিতা
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা class 7,
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা class 9,
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে উক্তি,
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা class 10,