প্রাণায়াম কী,প্রাণায়াম করার নিয়ম পদ্ধতি এর উপকারিতা
আজকাল সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন,নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ ও নানা রকম চিন্তা ভাবনার কারণে আমাদের ব্রেইন ও মন এর উপর চাপ পড়ছে তাই বর্তমানে আমরা মানুসিক চাপের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে দৌড়াচ্ছি ,কিন্তু আমাদের হাতের কাছে প্রাণায়ামের মতো ব্যায়াম রয়েছে যা আমাদের এ ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আসুন জেনে নিই প্রাণায়াম কি, প্রাণায়ামের সঠিক নিয়ম , পদ্ধতি ও উপকারিতা ।
Pranayam |
প্রাণায়াম কি, প্রাণায়াম করার নিয়ম, প্রাণায়াম করার পদ্ধতি, প্রাণায়াম এর উপকারিতা জানার কারণ আমরা সবাই চাই সুস্থ শরীর ,সুস্থ মন ও কর্মময় জীবন। আর এই জীবন সুস্থ রাখতে হলে আমাদের প্রয়োজন নিয়মিত শরীর চর্চা ,আরে দাঁড়ান শরীর চর্চা মানে জিম অথবা দৌড়াদৌড়ি করতে বলছিনা। বলছি দৌড়ঝাঁপ ছাড়াও কিছু অন্য রকম শরীর চর্চার কথা ,ঠিক ধরেছেন -যোগব্যায়াম এর কথাই বলছি।
আরো পড়ুন:ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
তবে দৌড়াদৌড়ি ও জিম এক প্রকার ব্যায়াম তবে এর জন্য আমাদের হাতে না আছে সময় আর না আছে অর্থ অথবা বয়স। আর এধরণের ব্যায়ামে শরীরের ক্ষয় যেমন হয় তেমন ই পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন,কিন্তু বললাম যে আমাদের অনেকেরই তা সাদ্ধের মধ্যেই নেই তবে ইচ্ছা আছে ষোলোআনা। তাইতো আমি এনেছি আপনাদের জন্য যোগ ব্যায়ামের কিছু অজানা উপকারিতা নিয়ে। এই যোগব্যায়াম ভারতের পৌরাণিক সম্পদ ,তখনকার যোগীরা এই যোগব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমেই প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ,দীর্ঘস্থায়ী যৌবন ও দীর্ঘজীবনের (দীর্ঘ আয়ুর )অধিকারী ছিলেন।
প্রাণ সাধনা/ প্রাণায়াম কি (What is pranayama)
প্রাণের মুখ্য দরজা হলো নাক, আর নাকের ছিদ্র দিয়ে আসা যাওয়া করতে থকা নিশ্বাস প্রশ্বাস হলো বেঁচে থকাৰ জন্য জীবনের মূল রসদ। এই প্রাণায়াম এর মধ্য দিয়ে ব্যাক্তির মন দেহের অভ্যন্তর জগতে প্রবেশ হয় ,তাই নিজের মনকে শান্ত ও সুস্থ করার জন্য আদিযুগে প্রাচীন মুনি ঋষিরা এই প্রাণায়াম বিধির প্রচলন করেন। জগ্দর্শনের মতানুসারে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর গতি কে আটকানোই প্রাণায়ম। নিঃশ্বাস যখন আমরা নিয়ে থাকি তখন শুধুমাত্র অক্সিজেন অথবা বায়ু শরীরে প্রবেশ করেন এর সাথে বাহ্যিক এক অখণ্ড অলৌকিক শক্তি প্রবেশ করে যা আমাদের জীবনী শক্তি কে বজায় রাখে প্রাণায়াম করার নিয়ম।
আরো পড়ুন:দিনের ১২ টি ভালো অভ্যাস যা আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং মন থাকবে সতেজ
উপরে জানলাম প্রাণায়াম কি,আমাদের এই নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাস শুধুমাত্র আমাদের বাঁচায়না বরং বায়ুর সাথে পরম জীবনী শক্তিও প্রবেশ করায়।
আসুন জেনে নিই প্রাণায়ামের সঠিক নিয়ম পদ্ধতি গুলি (Rules of doing pranayama)
১.প্রাণায়াম করার পদ্ধতি, জলের ধারে বসে করুন ,আর না সম্ভব হলে নির্জন ও পরিষ্কার জায়গায় প্রাণায়ামের অভ্যাস করুন।
২. প্রাণায়াম করার নিয়ম, একটানা অভ্যাস করার জন্য একটা আকর্ষণ দরকার ,তাই ধুনো অথবা যে কোনো সুগন্ধি ধুপ দ্বারা জায়গাটি সুগন্ধিত করুন।
৩.প্রাণায়াম অভ্যাস এর জন্য সর্বদা পদ্মাসন।,বজ্রাসন অথবা সিদ্ধাসন এ বসতে হবে ,এবং কোনো মাদুর ছাড়া, পারলে নরম কম্বল এর আসন ব্যবহার করুন।
৪. প্রাণায়াম করার পদ্ধতি, নাক দিয়ে সর্বদা নিঃস্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন অভ্যাস এ থাকাকালীন অবস্থায় ,কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে।
আরো পড়ুন:ভ্রমণের ১০ টি উপকারিতা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
৫. প্রাণায়াম করার নিয়ম প্রাণায়াম করার সময় হলো খাবার ৪-৫ ঘন্টা পরে প্রাণায়াম করুন। প্রথমে অল্প সময় প্রাণায়াম প্রাকটিস করুন এবং আস্তে আস্তে সময় বাড়ান।
৬. প্রাণায়াম করার পদ্ধতি, শিরদাঁড়া সোজা রেখে জোরে জোরে নিঃস্বাস নিন ,৬০ সেকেন্ডে শ্বাস সংখ্যা বাড়ান এটাই প্রাণায়ামের মূল নিয়ম।
আসুন সুস্থ থাকি, যোগব্যায়াম এর মতো ঐতিহ্যশালী কিছু পুরনো ব্যায়াম কে বাঁচিয়ে নিজেদের রোগ ব্যাধি দূর করার সাথে সাথে শরীর সুস্থ রাখি।
প্রাণায়াম এর উপকারিতা (pranayama benefits)
প্রাণায়ামের একটি নিজস্ব বিশেষত্ব বর্তমান এই প্রাণ্যম প্রত্যেক ব্যক্তি নিয়মিত অভ্যাস করতে সক্ষম নন ,তবে যে ব্যাক্তি সঠিক ভাবে নিয়মিত প্রতিদিন প্রাণায়াম অভ্যাস করবে সে যে সব উপকার পাবে কপালভাতি প্রাণায়াম এর উপকারিতা -
আরো পড়ুন:প্রতিদিন বই পড়ার গুরুত্ব, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
1.এটি একটি শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম পদ্ধতি এর ফলে ফুসফুস বলিষ্ট হয় ,রক্ত সঞ্চালন হয় ,আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি হয়।
2.এর
প্রভাবে উদ্বেগ ,চিন্তা ,রাগ (ক্রোধ ),নিরাশা/হতাশা ,অতিরিক্ত ভয় ,ইত্যাদি মনোরগের একমাত্র সমাধান এই প্রাণায়ম।
3. প্রাণায়াম এর উপকারিতা, যে বেশি পরিমান শ্বাস নেয় সে বেশি দীর্ঘজীবী হয়। শুধু তাই নয় ,এর প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে তোলে।
4. বুদ্ধি মত্তা ,দূরদর্শিতা ,সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ,সুক্ষ নিরীক্ষণ , মেধা ও মনোযোগ বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট এর সৃষ্টি হয়।
5. কপালভাতি প্রাণায়াম এর উপকারিতা, বাত ,পিত্ত ,কফ ইত্যাদি নির্মূল হবে চিরদিনের মতো।
6. লিভারের সম্পূর্ণ সমস্যা দূর হয় ,এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা সেরে যায়।
7. প্রাণায়াম এর উপকারিতা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় বহুগুনে।
8.মুখের ঔজ্জল্যতা ,কান্তি ও তেজ আসে।
9.ডিপ্রেশনের মতো সমস্যার দূর হয়ে ,মন স্থির ও শান্ত হয়ে যায়।
এছাড়াও কিছু অন্যান্য মানুসিক লোভ ,মোহো। রাগ ইত্যাদি দূর হয়।
অন্য পোস্ট : প্রাণায়াম করে বাড়িয়ে নিন শরীর ও মনের ক্ষমতা, জানুন ৫ উপকারিতা
প্রাণায়াম এর অভাবে যা সম্ভাবনা
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যাক্তি গভীর ভাবে শ্বাস নিতে অভ্যস্থ নয় ,যার কারণে ফুসফুসের একের চার ভাগ নিষ্ক্রিয় হয় এবং যক্ষা ,কাশি ,বঙ্কাইটিস ইত্যাদি বিভিন্ন ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর শিকার হয়।
অন্য পোস্ট :বিভিন্ন যোগাসনের ব্যায়াম পদ্ধতি,উপকারিতা, ছবি ও নাম সহ
প্রাণায়াম করার সময় ,মেরুদণ্ডের হাড় সোজা থাকতে হবে অবশ্যই ,তাই এর জন্য যে কোনো ধনাত্মক আসনে বসতে হবে যেমন-সিদ্ধাসন,পদ্মাসন ,সুখাসন ও বজ্রাসন ইত্যাদি। এছাড়াও যদি কোনো আসনে বসতে অসুবিধা থাকে তাহলে চেয়ারে ও সোজা হয়ে বসে প্রাণায়াম করা যায় ,কিন্তু মেরুদণ্ডের হাড়কে সর্বদা সোজা রাখতে হবে। প্রাণায়াম কি, প্রাণায়াম করার নিয়ম, প্রাণায়াম করার পদ্ধতি, কপালভাতি প্রাণায়াম এর উপকারিতা, বিস্তারিত জানালাম এতে মনের বেয়াম হয় ,ও মেরুদণ্ডের সাথে যুক্ত চক্র গুলিও জাগরিত হয়।
আমাদের গুগল নিউজ পোস্ট গুলি ফলো করুন ☛ Google News