দীঘা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ ও হোটেল ভাড়া
বাঙালি যেমন খাদ্য রসিক তেমনই ভ্রমণ রসিক। ভ্রমণ যেন বাঙালির রক্তে ,আর ভারতের বেশিরভাগ বাঙালি মধ্যবিত্ত। তাই রক্তে ভ্রমণ এর নেশা থাকলেও পকেটে থাকেনা ,এছাড়া সঠিক সময় ও হয়ে ওঠেনা ঠিকমতো বাঙালিয়ানার ভ্রমণ পিপাসু হয়ে ওঠার। দীঘা আবহাওয়া, সেকারণে যখনই কাজের ছুটি মেলে তখন মনটা ঘুরি ঘুরি করে দীঘা দীঘা। তাই অল্প খরচে ঘোরার সঠিক মনোরম ভ্রমণ স্থান হলো দীঘা ভ্রমণ, পশ্চিম বঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত দীঘা সমুদ্র সৈকত।
দীঘা সমুদ্র সৈকত দীঘা ভ্রমণ
পথনির্দেশ
দিঘায় যাওয়ার জন্য আমরা সাধারণত রিসার্ভেসন টিকিট কেটে থাকি। কিন্তু অনেক সময় আমাদের রিসার্ভেসন টিকিট বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু রিসার্ভেসন বাতিল হওয়ার ফলে মন খারাপ করবেননা ,কারণ আপনার মুশকিল আসান হলো লোকাল ট্রেইন। হাওড়া থেকে লোকাল ধরে পাঁশকুড়া পর্যন্ত্য যান এরপর ওখান থেকে ডাইরেক্ট দীঘা যাওয়ার বাস পাবেন এতে আপনার ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুন : ভ্রমণের ১০ টি উপকারিতা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
দীঘা সমুদ্র সৈকত
এবার
আসুন দেখে নিই দীঘার দর্শনীয় স্থানগুলি।এখানে ঘোরার জন্য যে সমস্ত
জায়গা গুলি আছে সেগুলি যেমন প্রাকৃতিক তেমনই মনোরম। বাঙালিদের অল্প খরচে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ঐতিহ্য ময়ী জায়গা হলো এই দিঘা।
১.অমরাবতী লেক
এটি
দিঘার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচুর্যময়
ভ্রমণ স্থান পর্যটকেরা দিঘায় এলে ওমরাবতিলেকে অবশ্যই
আসেন। কারণ ,এখানে আরামদায়ক নৌকো ভ্রমণ এর সাথে সাথে
নদীর ঢেউ দোলা যেন নেশা হয়ে যায়। মানুষ এই ঢেউ দোলানোর
সাথে সাথে পার্শবর্তী পার্ক
ও সর্প উদ্যানের বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখে আনন্দ উপভোগ করে, ইচ্ছে ও সময় হলে আপনি ও ঘুরে আসতে
পারেন দিঘার
অমরাবতী লেক।
২. জুনপুট
এটি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মাননীয়া মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উদ্যোগে নির্মিত
নতুন সংস্কার। যা মৎস্য দপ্তরের
বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষের জন্য নির্মিত , এটি নান রকম মাছের প্রাচুর্যতার জন্য বিখ্যাত। এখানে বিশেষ বিশেষ নখানা দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ ও নতুন নিষেকের
সাহায্যে নতুন প্রজাতির মাছ তৈরির প্রচেষ্টা
চলছে।এগুলি মন ভালো করার সাথে
সাথে, শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষের আগ্রহ
মেটানোর সঙ্গে নতুন অনেক কিছু জানতে সহায়তা করে।
৩.মন্দারমনি
এই
জায়গাটির নাম মন্দার ফুলের নাম অনুযায়ী রাখা হয়েছে।কাঁথি থেকে এর দূরত্ব মাত্র
১২ কিমি ,পাশাপাশি এটি ১০ বর্গমাইল জুড়ে
অবস্থিত।এখানকার বোটিং এর উত্তেজনা ও
বিশাল সামুদ্রিক ঢেউ আপনাকেও মুগ্ধ করবে। পর্যটকদের দিঘা ভ্রমণের সাথে সাথে এই মনোরম বিশ্রাম
কর জায়গাটি খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে ,এক রিসার্চ এ
দেখা গেছে বছরে প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি
মানুষ মন্দার মনি ভ্ৰমণ করে থাকেন। সময় বুঝে আপনিও উপভোগ করতে পারেন মন্দারমনির প্রাকৃতিক নৈসিক দৃশ্য।
৪. ওল্ড দিঘা
দিঘা
যখন এখনকার মতো এতো উন্নত ছিলোনা তখন দিঘা বলতে ওল্ড দিঘা কে বোঝাতো। ধীরে ধীরে দিঘায়
পর্যটকদের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন তাদের
কে সঠিক ভাবে সমুদ্রের আনন্দ উপভোগ করানোর জন্য দিঘার সমুদ্র সৈকতের বিস্তার করানো
হয় এবং দিঘা দুটি ভাগে ভাগ হয় ওল্ড দিঘা ও
নিউ দিঘা।
ওল্ড
দীঘাতে রয়েছে সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ের সামুদ্রিক ঢেউ খেলানো হৃদয়বিদারক
দৃশ্য ,এর সাথে নানা রকম জেলেদের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা ভাগ করার আনন্দ। এছাড়াও আপনি ডাব খেতে খেতে মনোরম বোটিং এর
দৃশ্য উপভোগ পারেন।
৫. শংকরপুর সমুদ্র সৈকত
দিঘার মধ্যে ভ্রমণের জন্য আরো একটি বিশেষ নজরকাড়া জায়গা হলো সংকর পুর সমুদ্র সৈকত ,যা দিঘা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। আপনি চাইলে দিঘা থেকে একটি টোটো নিতে পারেন যাওয়ার জন্য। এখানকার নিস্তব্ধ কেয়া ঝোপ ও ঝাউ ঝোপের মিষ্টি হাওয়া খাবার সাথে সাথে আপনি নিজেকে ফুরফুরে অনুভব করবেন। এছাড়াও যারা অতিরিক্ত কাজের চাপ এ থাকেন তারা চাইলে নির্জন শঙ্কর পুরের আরামদায়ক মিষ্টি সমুদ্রের বুকে বিশ্রাম নিতে পারেন। এই শংকরপুর সমুদ্র সৈকত আরো একটা কারণে বিখ্যাত সেটি হলো এটি একটি অন্যত্তম উন্নততম মৎসকেন্দ্র। যার কারণে এটি আকর্ষণীয়।
৬. উদয়পুর
এটি
লাল কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রচুর পরিমানে লাল কাঁকড়া পাওয়া যায়। এর সাথে সাথে
এটি ঝাউবন সহ কাজুবাদাম ও অন্যান্য নানারকম ঝোপের নিরিবিলি পরিবেশের জন্য জনপ্রিয়।
দীঘা হোটেল ভাড়া
দীঘা হোটেল
আপনি দীঘাতে তো ঘুরতে যাবেন কিন্তু থাকার জন্য তো একটি জায়গা দরকার তার জন্য রয়েছে আপনার রয়েছে অল্প খরচের দীঘা হোটেল।
১. দীঘা হোটেল ভাড়া, ডলফিন
তাই সর্ব প্রথম যাওয়া যাক ওল্ড দীঘা সমুদ্র সৈকত, থেকে ৫২০ মিটার দূরে জনপ্রিয় দীঘা হোটেল ভাড়া দেওয়া হয় ডলফিন, এখানে আপনি চাইলে এসিযুক্ত ডাবল বেডরুম নিতে পারেন যার ভাড়া পড়বে মাত্র ২৫০০ টাকার কাছাকছি। এছাড়া ও আপনি চাইলে স্মল রুম নন এসি ও নিতে পারেন এতে আপনার ১০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। এছাড়াও ও এখানকার একটি সুযোগ হলো আপনার খাওয়ার জন্য বাইরে যাওয়ার দরকার পড়বে না কারণ এখানে রেঁস্তোরা রয়েছে।
২. দীঘার হোটেল মাহেক (hotel mahek )
পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই হোটেল খুবই কার্যকরী কারণ দীঘার এই হোটেলটি দীঘা সমুদ্র সৈকত থেকে নিকটে অবস্থিত। দীঘার রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিমি দূরে এই Hotel Mahek . অন্যদিকে সমুদ্রতট থেকে এর দুরুত্ব মাত্র ২০০ মিটার এর কাছাকাছি। পর্যটকরা তাই হোটেলে থেকে ও দীঘা ভ্রমণের নৈসিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে কারণ এই দীঘা হোটেলটি সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি
এখানে AC /NON AC সব ধরণের রুম পাওয়া যায়। আপনি চাইলে অনলাইন এ বুক করতে পারেন এই hotel mahek এর রুম Makemytrip ওয়েবসাইট থেকে। খাবার সহ এর খরচ ২০০০ এর বেশি পড়তে পারে।
৩. চন্দনা গেস্ট হাউজ এন্ড হলিডে হোম (Chandana guest house & holiday home ) নিউ দীঘা হোটেল
নিউ দীঘা সমুদ্র সৈকত থেকে এর দুরুত্ব ২ কিমি নিউ দীঘা হোটেল,Chandana guest house & holiday home । এবং ওল্ড দীঘার বাস স্ট্যান্ড থেকে এটি প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, দীঘা ভ্রমণ, আপনি চাইলে মেহেরু মার্কেট থেকে ও যেতে পারেন। ওখান থেকে ৪৩৯ থেকে ৪৪০ মিটার এর মতো দূরে এই হোটেল অবস্থিত। এখানে সমুদ্রের মায়াবী গর্জন ও নৈসিক আবহাওয়া উপভোগ করার জন্য সুন্দর জায়গা। দীঘা এই হোটেল ভাড়া জন্য সাধারণ রুমের জন্য ১০০০ টাকার মধ্যে খরচ হবে এবং স্পেশাল রুমের জন্য একটু বেশি খরচ পড়বে। এছাড়া ও এখানকার বিশেষ সুবিধা গুলি হল Wi Fi ফ্রি ও পাওয়ার ব্যাকআপ।
দীঘা আবহাওয়া
দিঘা
প্রত্যেক ঋতুতে আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক সৈন্দর্যে
নতুন নতুন রূপে সেজে ওঠে। সেক্ষেত্রে বলতে গেলে দিঘার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য
কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই কারণ ,প্রত্যেক ঋতুতে দিঘা নতুন রূপে সেজে ওঠে। দীঘা দীঘা, এখানে
সাধারণত ৫ টি ঋতু লক্ষ্য করা যায়। গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা খুব বেশি হলে ৪০ ডিগ্রি
পর্যন্ত দেখা দেয়। দীঘা আবহাওয়া, এই সময় এখানকার আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে। এছাড়াও সাধারণত ,বর্ষা ,শীত
ও বসন্ত ঋতু মোটামুটি মনোরম হয়। তবুও তার মাঝে
বসন্ত কাল দিঘায় ভ্রমণের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুন : কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা
দিঘার জনপ্রিয় খাবার
দিঘা
ভ্রমণের সাথে সাথে খেতেও হবে। কোথায় আছে পেট খুশি তো সব খুশি,তাই আসুন জেনে নিই দিঘার
বিখ্যাত খবর গুলি সম্পর্কে। এখানে দেশি বিদেশি সব রকমের খাদ্য খাবার পাওয়া যায় তবে
এখানে দিনের বেলায় ডাব খাওয়ার চল দেখা যায় পর্যটক রা এটি আরামদায়ক মনে করেন,সন্ধ্যায়
বিভিন্ন মাছ ভাজার দোকান বসে। যেখানে সমুদ্রের মাছ ভাজা পর্যটকদের খুব প্রিয়।
দিঘায়
কি নেই -প্রকৃতি প্রেমী থেকে শুরু করে বিজ্ঞান প্রেমী দের সবারই পছন্দের নানান বিশেষ
স্থান রয়েছে। যা লিখে বর্ণনা করা অসম্ভব নয়
তবে পাঠকদের পড়তে সময়ের অভাব তার চেয়ে আপনি সঠিক সময় ও সুযোগ বের করে অবশ্যই একবার
হলেও ঘুরে আসুন দিঘায়।