ডায়াবেটিস কি,এর লক্ষণ,চিকিৎসা ও রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়বেটিস হলো খুবই কমন একটি রোগ, বিশ্বের শতকরা ৯৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে এই রোগ টি প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিসের ফলে আমাদের শরীরে আরো অন্যান্য রোগ জড়িয়ে যায়। ফলে আমরা কোন রোগের চিকিৎসা করাব তা সিদ্ধান্ত নিতে চিন্তায় পড়ে যায়। তাই আজকের আমাদের এই আলোচনা। আসুন সর্বপ্রথম জেনে নিই ডায়াবেটিস কি,এর লক্ষণ,চিকিৎসা ও রোগীর খাদ্য তালিকা।
Type 2 diabetes food list |
ডায়াবেটিস কি, এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস কি
এটি হলো একটি বিপাকজনিত রোগ, ডায়াবেটিস কেন হয়? মূলত রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে অথবা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে আমাদের শরীরে চিনি,গ্লুকোজ এর পরিমান বেড়ে যায় এবং ইন্সুলিন যেহুতু কাজ করতে পারে না তাই চিনি বা গ্লুকোজ আমাদের রক্তে ভেসে থেকে শরীরের নানা অঙ্গে জটিলতার সৃস্টি করে।
আমাদের অন্য পোস্ট : ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির সহজ উপায়
ডায়াবেটিস মূলত চার প্রকারের হয়ে থাকে -
১. টাইপ-১ (Type -1)
এই প্রকার ডায়াবেটিস মূলত বাচ্চাদের হয়ে থাকে প্রায় পাঁচ শতাংশ বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত। এটি মূলত বাবা মায়েদের ভুল ভ্রান্তির কারণে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বেশি পরিমানে ফাস্ট ফুড খেতে দেয়া বা ফোনের প্রতি আসক্তি করানো, যার ফলে দেহের চর্বি জমে স্থুলতা বেড়ে যায়। এই রোগ বাচ্চাদের মাঝে বংশগত কারণে ও আসতে পারে।
২. টাইপ-২ (Type -2)
এই প্রকার রোগটি ত্রিশ বছর বয়সের পর থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগ মূলত বংশগত কারণ ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, হাটাহাটি কম করা, অল্প ঘুমানো, অতিরিক্ত ডিপ্রেশন থাকা ও এলোমেলো জীবন যাপনের সাথে এলোমেলো খাদ্য গ্রহণ এর কারণ হতে পারে।
৩. GDM বা গর্ভকালীন অবস্থায়
৪. অপ্রয়জনীয় ওষুধ সেবন
ক্যাস্টার অয়েল যা আমরা বাত বেদনার জন্য সেবন করে থাকি, এছাড়া চর্মরোগের বিশেষ ঔষধ, চুলের সমস্যা জনিত ইত্যাদি ঔষধ অতিরিক্ত পরিমানে যখন আমরা প্রয়জনের থেকে বেশি খেয়ে ফেলি এর সাইট এফেক্ট হিসাবে ডায়াবেটিস রোগের দেখা মিলতে পারে। ডায়াবেটিস এর ফলে আমাদের শরীরে হার্ট এটাক, ব্রেইন স্টক, কিডনি ফেল, চোখ নষ্ট বা রাতকানা, যৌন অক্ষমতা হতে পারে।
আরো পড়ুন : রান্নার জন্য কোন তেল ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপকারী
ডায়াবেটিস
এর লক্ষণ
ডায়াবেটিসে যখন আমরা আক্রান্ত হই তখন হালকা কিছু সিমটমস (symptoms ) দেখা যায়। যেমন ঘন ঘন জল পিপাসা পাওয়া, ঘন ঘন প্রসব পাওয়া। এছাড়া প্রচুর পরিমানে খিদে পাওয়া, বেশি খেলেও ওজন ধীরে ধীরে কমে যাওয়া, ভিতর থেকে দুর্বল অনুভব করা। এছাড়া ডায়াবেটিস অন্যতম লক্ষণ খুব একটা দেখা যায় না তাই এই সমস্ত লক্ষণ এর উপর খেয়াল রেখে সতর্কতা হওয়াই শ্রেয়।
আরো পড়ুন : ঘুম আসে না কেন।। ঘুম বৃদ্ধির উপায়
ডায়াবেটিসের চেকাপ ও চিকিৎসা
ডায়াবেটিস চেকাপ দুই ধরণের হয় খালিপেটে ও ভরাপেটে। গ্লুকোমিটার যন্ত্রে ডায়াবেটিস টেস্ট করা হয়। ডায়াবেটিস টেস্টের দুইটি একক রয়েছে -মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার ও মিলিমোল/লিটার। একনজরে দেখে নিয় ডায়াবেটিস পরীক্ষা, টেস্ট রেজাল্ট
খালিপেটে টেস্ট
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? ১০০ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার অথবা ৫.৬ মিলিমোল/লিটারের নিচে যদি আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা হয় তখন আমরা বুঝবো যে আমরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত নয় ।
১০০ থেকে ১২৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অথবা ৫.৬ থেকে ৬.৯ মিলিমোল/লিটার যদি আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা হয় তখন আমরা বুঝবো যে এই পর্যায় ডায়বেটিস আক্রান্তের সম্ভবনা রয়েছে।
১২৬ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার অথবা ৭ মিলিমোল/ লিটার এর বেশি যদি রক্তে সুগারের মাত্রা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আমরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
ভরা পেটে টেস্ট
এই টেস্ট মূলত খাদ্য গ্রহণের ২ ঘন্টা পর করতে হয়।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল ? ১১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অথবা ৭ থেকে ৮ মিলিমোল/ লিটার এর নিচে যদি সুগারের মাত্রা থাকে বুঝতে হবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নয়
১৪০ থেকে ১৯৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অথবা ৭.৮ থেকে ১১ মিলিমোল/ লিটার হলে অথবা এর কাছাকাছি সুগারের মাত্রা হলে বুঝবো ডায়াবেটিস আক্রান্তের সম্ভবনা রয়েছে।
২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অথবা ১১.১মিলিমোল/ লিটার সুগারের মাত্রা হয় তাহলে বুঝতে হবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায়, চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা ,প্রায় বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রুগীর মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে সেটি হলো কি খাবো আর কি খাবো না ?
আরো পড়ুন : দিনের ১২ টি ভালো অভ্যাস যা আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং মন থাকবে সতেজ
এই প্রশ্ন সঠিক উত্তর টি অনেক ডায়াটেশিয়ান ও ডক্টরের পরামর্শ মতো প্রোটিন ও নির্দিষ্ট পরিমানে কার্বোহাইডেড যুক্ত খাদ্য খাবারের একটি ডায়েট চার্টের মাধ্যমে দিচ্ছি। যা আপনাকে বিশেষ ভাবে উপকার করবে ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে। দরকার শুধু ধৈর্য সহকারে এই ডায়েট প্লানটি পড়া ও ফলো করা। কে বলতে এই চার্ট ফল করলে হয়তো আপনার ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে,
সকাল
প্রী-ব্রেকফাস্ট, সকালে যদি আপনার চা অথবা কফি খাওয়ার বদ অভ্যাস থাকে তাহলে তা পুরো পুরি ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। কারণ চা তে ক্যাফেইন নামক একটি রাসায়নিক থাকে যা আমাদের ডায়াবেটিস রুগীদের ক্ষেত্রে বিপদজনক। আর যদি অভ্যাস ছাড়তে না পারেন তাহলে নিম্নলিখিত ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা, অনুসরণ করুন।
চা চিনি ও দুধ ছাড়া পান করুন। কারণ চিনিতে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি থাকে যা আমাদের স্তুলত্ব বাড়াতে সাহায্য করে আর স্থুলত্ব বাড়লে সুগারের মাত্রা বাড়ার সম্ভবনা থাকে।
আরো পড়ুন : পেটের মেদ এবং ওজন কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট, গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন কারণ এতে ক্যাফেইন এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। আশেপাশে দোকানে গ্রীন টি এর খোঁজ করুন।
চা এর সাথে বিস্কুট অথবা টোস্ট খাওয়া ছেড়ে দিন। কারণ এগুলি ময়দা দিয়ে তৈরী হয় আর ময়দায় ফাইবার থাকে না। আপনার প্রশ্নই জাগতেই পারে যে সুগার ফ্রি বিসকুট খেলে হয়তো সমস্যা নেই। আরে মশাই, এতে হয়তো বাহ্যিক চিনি দেওয়া নেই তবে ইহা তো ময়দা দিয়ে তৈরী। কাজেই বিস্কিট টোস্ট একেবারেই খাওয়া বন্ধ।
ব্রেকফাস্ট , চা খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাটাহাটি করুন কারণ ডায়েটেশিয়ানদের মতানুসারে ডায়াটিক রুগীদের ক্ষেত্রে হাটাহাটি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর পর ব্রেকফাস্ট এ রাখুন রুটি, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি দিয়ে তরকারি। ডায়াবেটিস রোগীর সবজি, ওটস , গাজর, বটবটি কড়াই, বাঁধাকপি দিয়ে খিচুড়ি। এতে নেট কার্বোহাইড্রেড ২২ শতাংশ কম থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়া ডিমের সাদা অংশ, দুধ পান করুন এগুলি প্রোটিন জাতীয় খাবার যা টাইপ-২ ডায়াটিকদের খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
দুপুর
দুপুরে
যদি ভাত খেতে ইচ্ছে করে তাহলে ঢেঁকিছাটা অথবা লাল চালের ভাত ৫০ গ্রাম খেতে
পারেন। তবে এর সাথে কম
করে ২৫০ গ্রাম সবজি দিয়ে তরকারি খান। এর সাথে আপনি
যে কোনো মাছ খেতে পারেন তবে সামুদ্রিক মাছ হলে বেশি ভালো হয়। দরকার হলে উচ্চে খান তবে হ্যাঁ ভাজা সবজি অথবা উচ্চে খাবেন না। এর সাথে স্যালাড
রাখুন কারণ এর প্রভাবে ডায়াটিক
দের চাহিদা হবে।
বিকালে
বিকাল বেলা আমরা অনেকেই ছোটোখাটো টিফিন খেয়ে থাকি, তবে এই টিফিনে অস্বাস্থকর তেলে ভাজা, প্যাকেট জাত স্নাক্স ইত্যাদি ডায়াবেটিসের খাদ্য তালিকায় না রাখাটায় শ্রেয়। ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়,
যদি টিফিন করতেই হয় তাহলে ডায়েট চার্টে রাখুন বাদাম, ভেজানো ছোলা অথবা আমন্ড। আমন্ড ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ডি এর অধিকারী যা ডায়াটিকদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় কারণআমন্ড এল ডি এল কোলেস্টোরেলোরে মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কোন ফল খেলে ডায়াবেটিস কমে? আর যদি ফল খেতে ইচ্ছে হয় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল,পেয়ারা খান কারণ পেয়ারা কে ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি বলা হয়।
রাত্রিবেলা
রাত্রিবেলায় ভাতের পরিবর্তে রুটি খান তবে হ্যাঁ ৩ টির বেশি নয়। ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা, রুটি রক্তে সুগারের মাত্রা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রুটির সাথে বেশিরভাগ সবজি দিয়ে বানানো তরকারি খান। এছাড়া ও যেকোনো ধরণের ডাল খেতে পারেন,ডায়াবেটিস কমানোর খাবার।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে প্রোটিন খুবই দরকারি তাই বেশি নয় সপ্তাহে ২ দিন আলু, চিকেন খেতে পারেন এছাড়া যে কোন সময়ে ডবল টন দুধ ,ডবল টোন্ড দই , মাছ , ডিমের সাদা অংশ খান। তবে হ্যাঁ যে গুলি খাবেন না একনজরে দেখে নিন -
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না
ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ফল খাবেন না,কলা , আম, চিনি জাতিয় খাদ্য খাবার , গুড়, মিস্টি, কোল্ড্রিংকস, জুইশ অথবা ফলের রস, আইসক্রিম, মাখন , ঘী, মার্জারিন, চিপ্স, পেস্ট্রি , চীজ , বাটার ইত্যাদি একেবারেই খাবেন না কারণ এগুলি ট্রাইগ্লিফারাইড্স এর মাত্রা বাড়ায় যার ফলে আমাদের হৃদ রোগ,স্ট্রোক এর আশংকা বাড়ে। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা, আলকোহোল ও প্যাকেটজাত যেকোনো খাবার এড়িয়ে চলুন। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার,আপনি যদি এই নির্দেশনা মেনে চলুন তাহলে আপনার কাছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুবই সহজ হয়ে যাবে।