রান্নার জন্য কোন তেল ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপকারী
আমরা বাঙালিরা যদি রান্নার বিষয়ে আসি তাহলে তেল মশলা ছাড়া অসম্ভব। অথবা কোনো কারণে যদি মাঝে মধ্যে তেল ছাড়া দুই একটা পদ রান্না হয়ে থাকে তাহলে মুখে দিতে পারি না। তেলের দাম বেশি হলেও আমরা তেল ব্যবহার করতে ও কিনতে সংকোচ বোধ করি না। তবে সব তেল কিন্তু শরীরের পক্ষে স্বাস্থ্যসম্মত তেল,উপকারী নয়। আমরা প্রত্যেকে রান্নার জন্য নানারকম তেল ব্যবহার করলে ও তার সঠিক গুনগত মান আমরা জানি না। তাহলে আসুন আমরা জেনে নিয় রান্নার জন্য কোন তেল ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপকারী, কয়েকটি তেলের বিশেষ উপকারিতা।
রান্নার জন্য কোন তেল ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপকারী
১. সরিষার তেল (Mustard oil)
সরিষার তেল খাওয়ার উপকারিতা, এই তেল প্রায় বেশিরভাগ বাঙালির রান্না ঘরে ব্যবহৃত হয়।রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা, আমাদের সুস্থতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কারণ এই তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অলীক অ্যাসিড ও লাইললেনিক অ্যাসিড যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পলি স্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায়, হার্ট , উচ্চরক্তচাপ,পেট ব্যাথা , মানসিক সমস্যা বিষয়ক রোগে কার্যকরী উপাদান সরিষার তেল। সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম, মেনে এই তেল ব্যবহার করলে নিশ্চিত নিশ্চিত উপকৃত হবেন। রান্নার জন্য ভালো ও স্বাস্থ্যকর, তাই আপনি এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
আমাদের অন্যান্য পোস্ট :
- পেটের মেদ এবং ওজন কমানোর উপা
- জেনে নিন মধুর গোপন কিছু উপকারিতা
- চুল লম্বা না হওয়ার কারণ ,ঘন করার উপায় ও তেলের নাম
- দিনের ১২ টি ভালো অভ্যাস যা আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং মন থাকবে সতেজ
- ডায়াবেটিস কি,এর লক্ষণ,চিকিৎসা ও রোগীর খাদ্য তালিকা
২. নারিকেল তেল (Coconut oil)
চুল ও ত্বক পরিচর্যার সাথে সাথে প্রায় ২ হাজার বছর আগে থেকে নারিকেল তেল রান্নার উপকরণ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা অনেকে কিন্তু জানি না যে নারিকেল তেল নাকি আবার রান্নার কাজে ব্যাবহার করা হয়। নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা, যেমনি স্বাস্থকর তেমনি পুষ্টিকর। এতে থাকে ফাইবার, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন যা আমাদের হজমের সহায়তা সাথে সাথে থায়রয়েড ফাঙ্কশন উন্নত রেখে ওজন কমাতে সহায়তা করে। এই নারিকেল তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে হার্ট এর সমস্যার সমাধান করে।
আপনি যদি আপনার দেহের সাস্থ সুস্থ রাখতে চান নারিকেল তেল দিয়ে রান্না করতে পারেন নারিকেল তেল রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর ও ভালো। আগে মনে করা হতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কিন্তু বর্তমান গবেষণায় জানা গিয়েছে এটি ক্ষতিকারক নয়। নারিকেল তেলে ৯০ শতাংশ সংযুক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা আমাদের শক্তি বাড়াতে ও লিভারের ড্যাজেস্ট্রিক ক্র্যাক্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া এই তেলে রয়েছে ৫০ শতাংশ ১২ কার্বন লিউরিক অ্যাসিড যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করেই। নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা, আমাদের পরিপাক ভালো করার সাথে সাথে হৃদ রোগ কমানো, রক্তে কোলেস্টরোল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমানো সাথে সাথে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত রোগ কমাতে সাহায্য করে। আপনি কি জানে কোন তেলে কোলেস্টেরল কম, সেটি হলো এই নারিকেল তেল। বিশেষ করে নারকিলে তেলে চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা দাঁত ক্ষয়রোধ করে।
৩. জলপাই তেল (olive oil)
পুষ্টিবিদদের
মতে জলপাই তেলের উপকারিতা, আমাদের শরীরে পুষ্টিক্ষমতার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জলপাই
তেলের বিশেষ উপাদান মুফাস ফ্যাট যা আমাদের ডায়াবেটিস,
ক্যান্সার , হার্ট এর রোগ থেকে
মুক্তি দেয়। রক্তে গ্লুকোজ কমায়, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও
পলিফেনোন উপাদান থাকায় মানসিক স্বস্তির কারণ জলপাই তেল। এই
তেলে স্কোয়ালিন ও টেরোপেন ওয়েট
যৌগ থাকায় ক্যান্সার , উচ্চ ইন্সুলিন ফ্যাট কমায়।
৪. সূর্যমুখী তেল (sunflower oil)
সূর্যমুখী দেখতে যেমন সুন্দর এর কাজ ও তেমন সুন্দর। এই ফুল সবথেকে বেশি চাষ হয় রাশিয়া,আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন। সূর্যমুখী ফুল থেকে অন্যান্য উপাদানের সাথে সাথে রান্নার জন্য সূর্যমুখী তেল, ও তৈরী হয়। এই তেল কে আমরা সূর্যমুখী তেল হিসাবে চিনি। তবে এই তেল রান্নার খুব একটা চলন নেই বললে চলে। তবে এর গুনাগুন জানলে আপনি ও এই তেল আদর করে ঘরে আন্তে বাধ্য হবেন। সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা, আমাদের শরীরে পুষ্টি গুন্ যুক্ত।
সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন-ই, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও কোপার ইত্যাদি এছাড়া এই তেল প্রচুর খাদ্য শক্তির উৎস। যা আমাদের শরীরের কার্যক্ষম বাড়ানোর সাথে সাথে দুর্বলতা ও কমাতে বিশেষ কার্যকরী। সেলেনিয়াম উপাদান যুক্ত এই তেল ক্যান্সার জীবাণুর সাথে লড়াইয়ের ক্ষমতা রাখে। আগেই বলেছি এই তেল কপার, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা আমাদের হাঁড় ও দাঁত মজবুত রাখার সাথে সাথে ক্ষয়রোধ করে।
ম্যাগনেসিয়াম এর প্রভাবে মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত চিন্তা কমিয়ে শান্ত রাখে। এবং ভিটামিন-ই থাকায় মাইক্রেনের মতো সমস্যা হেরে যায় এই তেলের রান্না খেলে। এবং ত্বকের সমস্যা যেমন সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক কে রক্ষা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে বাতের ব্যাথা ,গ্যাস্ট্রিক আলসার ,হাঁপানি রোগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সূর্যমুখী তেল। বিশেষত,এর গুরুত্বপূর্ণ গুনটি হলো ওজন বা ভুঁড়ি কমানো।
আপনি যদি নিয়মিত এই তেল রান্নার জন্য সূর্যমুখী তেল, খুবই ভালো ও স্বাস্থ্যকর। এই তেলে রান্না তৈরী করেন তাহলে আপনি নিশ্চিত ১০০ শতাংশ সুস্থ থাকবেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য সূর্যমুখী তেল দিয়ে তৈরী করুন।
৫. বাদাম তেল (almond oil)
বাদাম কিন্তু বিভিন্ন উপজাতির হয় , প্রতিটি আলাদা উপজাতির বাদাম আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ যুক্ত হয়। বাদাম কে বলা হয়ে থাকে হার্ট হেলদি ফুড। কারণ বাদাম আমাদের এল.ডি.এল (খারাপ)ও এইচ.ডি.এল (ভালো ) এর অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। এল.ডি.এল কে কমিয়ে এইচ.ডি.এল কে বাড়ায় যার প্রভাবে আমাদের হৃদ রোগ থেকে অনেকটা ভালো রাখে। তবে এই বাদাম থেকে অন্যান্য খাবার তৈরী সাথে সাথে তেল তৈরী করা হয় যা স্বাস্থসম্মত রান্নার উপকারী তেল।
এছাড়া এই তেল ডায়াবেটিস কমাতে বিশেষ কার্যকরি এবং বাদাম এর থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে বাদাম তেল। বাদাম তেল এর উপকারিতা, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা বিশেষত ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী। তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে এই উপকারী তেলের রান্না খান ধীরে ধীরে আপনার স্থুলতা কমতে বাধ্য হবে।
বাদাম তেলে আলফা টেকফেরল সহ ভিটামিন -ই থাকে যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়িয়ে চোখের অন্যান্য সমস্যা দূর করে। তবে এই তেল সরাসরি চোখে দেবেন না, এর কারণে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দরকার পড়লে এই তেল দিয়ে চোখের আসে পাশে হালকা ম্যাসেজ করতে পারেন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে চোখের নানান সমস্যা থাকে তাই এই তেল রান্না খাওয়ার পাশাপাশি চোখের আশেপাশে ম্যাসেজ করতে পারেন।
এছাড়া
এই তেলে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাঁড়, দাঁত
ও চুল মজবুত রাখতে সাহায্য করে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে এই তেলে থাকা
ফসফরাস , জিঙ্ক , সেলেনিউম্ বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিজের এবং বাড়ির সবার সাস্থ ভালো রাখতে অবশ্যই আজ থেকে বাদাম
তেলের রান্না খাওয়া শুরু করুন।
৬. তিলের তেল (Sesame oil)
তিল একটি শস্য দানা যাতে রয়েছে বিশেষ বিশেষ উপকারী প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ যা দিয়ে নানা রকম সুস্বাধু খাবার তৈরী হয়। তবে এর থেকে যে তেল উৎপাদন হয় তা বেশি উপকারী। এবং এই তেল যে রান্নায় বিশেষ উপযোগী স্বাস্থ্যসম্মত তেল, তা আমরা অনেকেই জানি না। তিলের তেল এর উপকারিতা, মানব শরীরে বাইরের সমস্যায় যেমন বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করি তেমনি অব্ভন্তরীন ভাবে অসুখ বিসুখ সারাতে ও সুস্থ থাকতে এই তেল রান্না করে খেতে পারি।
তবে এই তেল হালকা আঁচে রান্না করা উপকারী। তবে এই তিলের তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকে। ফাইবার, প্রোটিন,ভিটামিন-সি ইত্যাদি আমাদের হৃদ রোগ , উচ্চ রক্ত চাপ, টিবি ইত্যাদি রোগের থেকে আমাদের দেহ কে বিশেষ ভাবে রক্ষা করে। এছাড়া ও আমাদের রক্তে কোলস্টেরলের পরিমান মাত্রায় রাখে। তবে গর্ববতী মা ও বোনেদের থেকে এই তেল দূরে রাখুন। এতে গর্ভপাত ঘটতে পারে। আপনার শরীর সুস্থ রাখতে অবসসই এই তেল ব্যাবহার করুন।
আমাদের শেষ কথা
উপরের কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত উপকারী রান্নার স্বাস্থ্যম্মত তেল ও তাদের গুনাগুন ও ব্যবহারের নিয়ম আলোচনা করা হল। তেল ছাড়া রান্না অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব তেল একই রকম নয় প্রতিটি তেলের আলাদা আলাদা উপকারী ও অপকারিতা দিক রয়েছে। তাই রান্নার তেল ব্যবহার করার আগে একটু জেনে বুঝে ব্যবহার করা ভালো। আমরা প্রত্যেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে চাই এর জন্য প্রয়োজন সাবধানতা ও সচেনতা অবলম্বন করা। শুধু তেল নয় বাজারে প্রতিটা জিনিস ভেজাল বিক্রি হয়, তাই আমরা এই বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখবো।